Posts

Showing posts from August, 2019

আত্মজীবনীর ছেঁড়া পাতা

Image
তিন কামরার ছোট ফ্ল্যাট। একটা বসবার, দুটো শোওয়ার। একটা আমার মায়ের, একটা আমার। পশ্চিমে একফালি সরু ব্যালকনি। আমার নিঃসঙ্গ মায়ের একমাত্র সম্বল। ওখান দিয়ে সূর্য অস্ত যায়। মাথার উপর দিয়ে পাখির দল উড়ে যায় ক্লান্ত সূর্যটার দিকে। এই চার তলায় বসে নাকি খুব ভালো দেখা যায়। আমি কোনদিন দেখিনি। রাত্রে মায়ের মুখে শুনি। শুনি বিকেলের সন্ধ্যা হওয়ার গল্প। সন্ধ্যার রাত্রি হওয়ার গল্প। রাত্রির আরও গভীর হওয়ার গল্প। আমার মা খুব ভালো গল্প বলতে পারেন। ছেলেবেলায় গল্প শুনে আমরা ঘুমোতাম। আমি আর আমার দিদি। মা আমাদের অপু-দুর্গার গল্প বলতেন। দিদি মায়ের এক কোলে, আমি আর একটায়। দু চোখের পাতা এক হয়ে আসত মায়ের সুরেলা গলায়। স্বপ্নের রঙীন হাতছানির মধ্যে শুনতাম দিদি বলছে, তারপর? আমাদের বাবা কলকাতা শহরের বুকে একটু একটু করে নিজের ছোট ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন। কাজের মানুষ। সারাদিন নিজের কাজেই ব্যস্ত। স্ত্রী-ছেলেমেয়ের প্রতি সেভাবে নজর দিতে পারতেন না। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ী ফিরতেন অনেক রাত্রে। আমরা তখন মায়ের কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি। পরের দিন ঘুম চোখে যখন আমি স্কুলে যেতাম, আমার বাবা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বা

আমায় মার্জনা করবেন

Image
বিনয়ী লোকটাকে অনুপমের ভাল লাগল। হাত জোর করে বার বার বেফাঁস কথা বলার পর মার্জনা চাওয়ার ভঙ্গিটাও বেশ বিচিত্র। হাত দুটো সামনে জোড় করে কয়েকবার একটু কাঁপিয়ে দরাজ গলায় মাথা নত করে বেশ বলেন, - আমাকে মার্জনাকরবেন। এই যেমন একটু আগে ভোরের হালকা আলোয় সদ্য অবগাহন করে, বাসটা যখন চা পানের বিরতির জন্য দাঁড়িয়েছিল মালদা টাউনের কাছে একটা দোকানে। চায়ের দোকানটি যে তেমন ভাল নয়, সেটা জানিয়ে দিয়েই সেই হাত জোড়। - আমাকে মার্জনা করবেন। আপনি নতুন আসছেন এই পথে, আমি আজ দশ বছর... হেঁ হেঁ। সত্যিই অনুপম এই প্রথম রাতের বাসে রায়গঞ্জ যাচ্ছে। যদিও বছরে অন্তত তিন চার বার তাকে রায়গঞ্জ যেতে হয় অফিসের কাজে। প্রত্যেকবার সে ট্রেনেই আসে। এবার ট্রেনের টিকিট না পাওয়াতে বাসের উপরই ভরসা করতে হয়েছে। প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল এবারের যাত্রাটা বেশ একঘেঁয়ে হতে চলেছে। অন্যবার শেখর আসে তার সাথে, এবারে সেও বাইরে গেছে অন্য কাজে। কাজেই গোটা একটা রাতের বাস যাত্রা সম্বন্ধে একটু নাক সিঁটকোন ভাব ছিল অনুপমের। অন্যান্য অভস্থ্য যাত্রিরা বাস ছাড়তেই দিব্যি নাক ডাকতে শুরু করল। বোকা বোকা মুখে এদিক ওদিক দেখছিল অনুপম। এরা পারেও বাবা

একটি সাহিত্যমূলক রচনা

Image
একটা সময় ভাবতাম, গল্প কবিতা লিখে বেশ একজন কেউকেটা হয়ে উঠব। ছেলেবেলায় দু-তিনটে লিটল ম্যাগাজিনে কিছু লেখা বেরিয়েছিল। প্রতি বছর স্কুল পত্রিকায় আমার লেখা একটা না একটা থাকতই। তাতে অহংকারের মাত্রাটা আরও অনেক বড় হয়ে উঠেছিল। মাস্টারমশাইরাও প্রশংসা করতেন লেখার, বিশেষ করে বাংলার সুভাষ স্যার। বলতেন, লেখাটা ছাড়িসনে বাবা! হাত পেকে গেলে মন্দ হবি না। পাকা কাঁঠালের মতন যদি একবার পাঠক সমাজে গন্ধ ছড়িয়ে দিতে পারিস, ব্যাস, মার দিয়া কেল্লা! ক্লাসের বন্ধুরা বেশ সমীহ দৃষ্টিতে, মুগ্ধ হয়ে তাকাতো তখন। পাশে বসা সুবল ও দেখতাম আমার পাশে অনেকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে সরে বসেছে। সমবয়সী বন্ধুদের একটু নেক নজরে দেখতাম। হুঃ! তোরা কি আমার মতন লিখতে পারিস! লেখাটা একটা শিল্প, আর শিল্পী সবাই হতে পারে না। নিজেকে নিজেই কথাশিল্পী তকমা দিয়ে দিয়েছিলাম বন্ধুদের উপর ভরসা না করে। কারণ, কথাশিল্পী কথাটার মানেই হয়ত তারা জানে না। তাদের মতন অবোধ বালকদের কাছ থেকে নিজের প্রতিভটিকে সযত্নে নিরাপদ দূরত্বে রাখার দায়িত্বটা নিজেকেই নিতে হয়েছিল আমার। পাছে সাহিত্যের সুললিত শব্দ বন্ধুদের নিরীহ কানে জোরে ধাক্কা দিয়ে তাদের বিচলিত

হারানো প্রাপ্তি

Image
ওরা তিনজন যখন অটো থেকে থানার সামনে নামল তখনও টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। একেই অমাবস্যার রাত তার উপর আকাশের ঘন মেঘের জন্য চারিদিক যেন আরও নিকষ কালো আবরণে ঢাকা পড়েছে। পল্টু আর গনেশ নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল। একহাত দূরের মানুষও যেন ঠিক মতন ঠাওর হয় না। বৃষ্টির জন্যই বোধহয় রাস্তার আলোগুলোও আজ জ্বলছে না। অটোটা চলে যেতে একপাশে সরে এসে পল্টু বলল, ‘যেতেই হবে! হ্যাঁ রে!’ গনেশ আশপাশটা নজর বোলাচ্ছিল, এবার মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ! ভয় পাচ্ছিস কেন?’ পল্টু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে একটা ধরাল। ‘তোর হাত কাঁপছে কেন? সহজ হ!’ থানার সামনের ঘরটার দিকে দূর থেকে উঁকি দিয়ে বলল গনেশ। ‘না না ভয় কি?’ নিজের মনে মাথা নেড়েই বলল পল্টু। ‘চল এবার ভেতরে যাই।’ গনেশ বলল পল্টুর কাঁধে আলতো করে হাত রেখে। ‘আঃ আঃ আচ্ছা! আমাদের কেউ রেললাইনের ধারে দেখে ফেলে নি তো?’ পা বাড়িয়েও দু পা পিছিয়ে এল পল্টু। ‘ধ্যুর! কি যে বলিস! রাতটা কেমন অন্ধকার দেখছিস না! আর যা বৃষ্টিটা হল, কেউ দেখতেই পারে না। তুই মাইরি মিছিমিছি ভয় পাচ্ছিস। আর আমাকেও পাইয়ে দিচ্ছিস।’ ‘কি বলবি গিয়ে?’ আধ খাওয়া সিগারেটটা গনেশের দিক