Posts

Showing posts from March, 2021

শান্তনুর সময়

Image
সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর বাড়ি ফেরা । এই সময়টা শান্তনুর নিজস্ব । শিয়াল দা থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরতে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে । অফিস থেকে একটু আগেই স্টেশনে পৌছায় সে । তারপর অপেক্ষা করে থাকে । বোর্ডে প্ল্যাটফর্মের নম্বরটা ভেসে উঠলেই পরি কি মরি করে ছুট । যে ভাবেই হোক জানলার ধারে একটা সিট চাই । প্রায় দিনই পেয়ে যায় । মাঝে মাঝে এর জন্য কিছু খেসারতও দিতে হয়। কোন দিন হয়তো পিছন থেকে অন্য লোকের ধাক্কায় কনুইটা একটু ছড়ে গিয়ে নুনছাল উঠে গেল , কিংবা জামার একটা বোতাম বোঁ করে ছিঁড়ে মানুষের ভিড়ে গোত্তা খেতে খেতে হারিয়ে গেল। একদিন তো পা থেকে একপাটি জুতো খুলে লাইনের তলায় চলে গেল। সেদিন খালি পায়েই বাড়ি ফিরতে হল। কিছু করার নেই। এক-পায়ে জুতো পড়ে তো হাঁটা যায় না! আর মাসের শেষে নতুন জুতো কেনার কোন প্রশ্নই আসে না। তবু সে রোজ লড়াইটা করে। কোন মতে একবার সিটটা পেয়ে গলেই শান্তনু নিশ্চিন্ত । তার নিজস্ব সময় শুরু এখন । এবার সে মনে মনে চিন্তা করবে । নানান চিন্তা । কখনও অফিসের বড়বাবুর মুন্ডপাত করবে , কখনও স্ত্রী রমা - র । ছেলেটা উচ্ছ

একটি প্রাণ একটি গাছ

Image
  দুপুরে এলাহি খাওয়া-দাওয়ার পর বিশাল একটা ঢেঁকুর তুলে দুঁদে উকিল জয়দেব শিকদার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। আজ অনেকদিন পর মেয়ে জামাই এসেছে। নিজে বাইরে যেতে পারছেন না তো কি হয়েছে! তার বাড়িতে সবজি, মাছ-মাংস পৌছে দেওয়ার লোকের অভাব নেই। এক ফোনেই সব কাজ হয়ে যায়। জামাই অর্ক হাত ধুয়ে বসার ঘরে এসে ঢুকতেই জয়দেব বললেন,-মাংসটা কেমন খেলে বল অর্ক? খাস বারবারি জাতের খাসি বুঝলে! অনেক কষ্টে জোগার করেছি তোমাদের জন্য। মেয়ে সুলতা বিয়ের পর গত চার বছর মুম্বাইতেই ছিল অর্কর সাথে। অর্ক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সম্প্রতি সে মুম্বাই থেকে কলকাতার অফিসে বদলি হয়ে এসেছে। সেই থেকেই জয়দেব আর সাবিত্রি বলে চলেছেন তাদের কয়েক দিনের জন্য এসে থেকে যেতে। কিন্তু লকডাউনের জন্য আসব আসব করেও আর আসা হয় না। এর মধ্যেই আবার আমফানের ধাক্কায় কলকাতা বিধ্বস্ত হল। জয়দেব আর সাবিত্রি মেয়েকে দেখার জন্য পাগল হয়ে উঠলেন। অবশেষে আজ তারা এসেছে। অর্ক উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলো কেবল। সে জানে তার শ্বশুর জয়দেব একজন দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ। তাঁর প্রতিটা কথাতেই অহঙ্কার আর হামবড়া ভাব। অর্ক নিজে যদিও এই ধরনের কথা একদম পছন্দ করে না। মন থেকে শ্বশুরকে প্রণামও করতে

খেলা

Image
চায়ের কাপটা টেবিলের উপর ঠক্ করে রেখে আত্রেয়ী বলল, —আর পারছি না। এবার যা হোক একটা ব্যবস্থা কর। বুড়ো জাস্ট অসহ্য হয়ে উঠছে দিন দিন। রবিবারের সকালে আয়েস করে খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে চা খাবে ভেবেছিল হিমাংশু, কিন্তু সেটা আর হবে বলে মনে হল না তার। একটু ব্যাজার মুখে সে বলল, —কি হল আবার? —সেটা ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে ভাল হয়। সকাল থেকে রাত যতই করি না কেন, আমি তো পরের বাড়ির মেয়ে মন পাব না জানি। —আহ্! কি হয়েছে সেটা বল না! —সকালে চা দিতে গেলাম। অন্তত সাত-আটবার ডেকেছি, কোন সাড়া নেই। উত্তরটাও কি বুড়ো দিতে পারে না? চিন্তিত মুখে কাগজটা নামিয়ে রাখল হিমাংশু। বাবা উত্তর দিল না! শরীর খারাপ হল নাকি আবার? চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে আবার বাধা পেল হিমাংশু, —চা-টা দয়া করে খেয়ে যাও, আমি আবার দশ মিনিট পর গরম করে দিতে পারব না। ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল আত্রেয়ী। বিস্বাদ মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিল হিমাংশু। জিভ ঠোঁট আর গলায় একসঙ্গে গরম ছ্যাকা লাগল, তাও পরোয়া করল না সে। কোণার সবচেয়ে ছোট ঘরটায় থাকে বাবা। একটা মাত্র জানলা, তাও রাত্রে বন্ধ করে রাখে। দড়জা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই একরাশ আলো-আঁধারি এসে ঘিরে ধরল হিমাংশুকে। চো