খেলা


চায়ের কাপটা টেবিলের উপর ঠক্ করে রেখে আত্রেয়ী বলল, —আর পারছি না। এবার যা হোক একটা ব্যবস্থা কর। বুড়ো জাস্ট অসহ্য হয়ে উঠছে দিন দিন।

রবিবারের সকালে আয়েস করে খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে চা খাবে ভেবেছিল হিমাংশু, কিন্তু সেটা আর হবে বলে মনে হল না তার। একটু ব্যাজার মুখে সে বলল, —কি হল আবার?

—সেটা ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে ভাল হয়। সকাল থেকে রাত যতই করি না কেন, আমি তো পরের বাড়ির মেয়ে মন পাব না জানি।

—আহ্! কি হয়েছে সেটা বল না!

—সকালে চা দিতে গেলাম। অন্তত সাত-আটবার ডেকেছি, কোন সাড়া নেই। উত্তরটাও কি বুড়ো দিতে পারে না?

চিন্তিত মুখে কাগজটা নামিয়ে রাখল হিমাংশু। বাবা উত্তর দিল না! শরীর খারাপ হল নাকি আবার?

চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে আবার বাধা পেল হিমাংশু, —চা-টা দয়া করে খেয়ে যাও, আমি আবার দশ মিনিট পর গরম করে দিতে পারব না। ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল আত্রেয়ী।

বিস্বাদ মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিল হিমাংশু। জিভ ঠোঁট আর গলায় একসঙ্গে গরম ছ্যাকা লাগল, তাও পরোয়া করল না সে।

কোণার সবচেয়ে ছোট ঘরটায় থাকে বাবা। একটা মাত্র জানলা, তাও রাত্রে বন্ধ করে রাখে। দড়জা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই একরাশ আলো-আঁধারি এসে ঘিরে ধরল হিমাংশুকে। চোখটা একটু সয়ে যেতে সে দেখল বিছানার উপর বাবা শুয়ে আছে পাশ ফিরে। ময়লা মশারির মধ্যে দিয়ে তাকে হালকা দেখা যাচ্ছে। এই গরমেও একটা চাদর গায়ে চাপিয়েছে। মাথার উপর পাখাটা ক্যাচ্-ক্যাচ্ শব্দ তুলে ঘুরে চলেছে আস্তে আস্তে।

খুব মায়া হল হিমাংশুর। একে তো এই ভ্যাপসা একটা ছোট ঘর। তার উপর ময়লা একটা মশারি। কতদিন ওটা কাঁচা হয়নি কে জানে! সে নিজে সময় করে উঠতে পারে না। সেই সকাল ন’টায় অফিস ছোটে, ফিরতে ফিরতে রাত আটটা সাড়ে আটটা। বাবা বলে যে একজন পড়ে আছে এক কোণে সেটা সে বোধহয় ভুলেই গেছে। মাঝে মাঝে আত্রেয়ীর অনুযোগ অভিযোগের তীরগুলো যখন গায়ে এসে বেঁধে, তখনই মনে পড়ে যায় লোকটার কথা। এই আজ যেমন।

পিছনে কখন আত্রেয়ী এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি হিমাংশু। তার গলার আওয়াজে চমকে উঠলো সে, —বলি হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলে যে! বুড়োকে তুলে চা-বিস্কুটটা গেলাবার বন্দোবস্ত করে আমাকে উদ্ধার কর।

—উফ্! মনে মনে বিরক্ত হয়ে হিমাংশু দড়জার পাশের দেওয়ালে লাইটের সুইচটায় চাপ দিল।

একটা কম পাওয়ারের এল-ই-ডি বাল্বের সাদা আলায় ঘরটা সামান্য আলোকিত হল।

—মাশারিটার হাল দেখেছ! একটু কেঁচে দিতে পার না মাঝে মাঝে?

—নাহ! পারি না। আমার একশ সত্তর রকমের কাজ থাকে। উনি নিজেও তো একটু করে নিতে পারেন। তা কাঁচবেন কেন, জাত যাবে যে! যত্তসব। মুখ ঘুরিয়ে ঘর থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেল আত্রেয়ী।

আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল হিমাংশু। খাটের পাশে ছোট টেবিলটার উপর একগাদা পুরনো খবরের কাগজ ছড়িয়ে রয়েছে। কয়েকটা ম্যাগাজিন, তাও অনেক পুরনো। একপাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে মায়ের একটা ছবি। তার মালাটাও শুকিয়ে গিয়েছে বোধহয় অনেক দিন আগে। মা চলে গেছে দশ বছর হল। এখন আর কে নিয়ম করে মালা-টালা দেয়। বাবাই প্রত্যেক বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে একটা করে পরিয়ে দেয়। এটা মনে হয় সেটাই। তাহলে কতদিন হল? চেষ্টা করেও মায়ের মৃত্যুর তারিখটা মনে করতে পারল না হিমাংশু। নিজের উপর রাগ হল তার। ছড়িয়ে থাকা কাগজগুলো দু’হাতে ঠেলে টেবিলের সামনেটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করল সে।

মশারিটা তুলে অবাক হয়ে গেল হিমাংশু। বিছানাটা ফাঁকা। পাশ-বালিশের উপর চাদরটা এমন করে পড়ে রয়েছে হঠাৎ দেখে কেউ শুয়ে আছে বলেই মনে হয়। অবাক বিস্ময়ে ফাঁকা বিছানাটার দিকে তাকিয়ে রইল হিমাংশু।

এরই মধ্যে তুতান কখন এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে হিমাংশুর মোবাইলটা। সেও অবাক চোখে চেয়ে রয়েছে।

—দাদু কোথায় বাবা? বাথরুমে তো নেই, আমি একটু আগেই গেলাম যে।

—হুম! দেখছি বাবা। নিজের মনেই আলতো স্বরে উত্তর দিল হিমাংশু।

—তোমার ফোন বাজছিল। মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলল তুতান।

এই সাত সকালে আবার কে? মনে মনে বিরক্ত হল হিমাংশু। ঘরের একমাত্র জানলাটা খুলে দিল সে। সকালের নরম রোদ গড়িয়ে এল ঘরে। বিছানার দিকে আবার ভালো করে তাকাল হিমাংশু। রাতে কেউ শুয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। চাদর টান টান করে পাতা।

ঘর থকে বেড়িয়ে আসতে আসতে হিমাংশু মিসড্ কলটা কার দেখার জন্য মোবাইলে চোখ রাখল। অপরিচিত একটা নম্বর। গা করল না, যার দরকার সে আবার করবে। বসার ঘরে ফিরে এসে আবার সোফার কোণে ধপ করে বসে পড়ল সে।

—একটু এদিকে এস! কি কান্ড দেখ! রান্নাঘর থেকে আত্রেয়ীর গলা ভেসে এল। অন্যমনস্ক হিমাংশু প্রথমটা ঠাহর করতে পারে নি। মাথা তুলে এদিক ওদিক চেয়ে শব্দের উৎসস্থলটা বোঝার চেষ্টা করল কয়েক মুহূর্ত। তারপর ছিটকে উঠে দ্রুত পায়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটল। বাবার কি রান্নাঘরের ওদিকে গিয়ে কিছু হল?

তাকে হাঁপাতে দেখে আত্রেয়ী ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল কয়েক পলক, তারপর তার পরিচিত ঝাঁঝাঁলো গলায় বলল, —এবার যে ডিম এনেছ তার মধ্যে চারটেই পচা। এগুলো কি করব এবার বল!

—বাবা! অস্ফুট স্বরে বলল হিমাংশু।

—তোমার বাবাকে দেব? সে কি করবে পচা ডিম দিয়ে? অবাক চোখে চাইল আত্রেয়ী।

—বাবা ঘরে নেই। বিছানা ফাঁকা।

—ঘরে নেই? বাথরুমে গেছে হয়ত। গিয়ে দেখ!

—না, সকাল থেকেই নেই। কোথাও নেই।

—সেকি! আত্রেয়ীর হাতের খুন্তি থেমে গেল।

হিমাংশু ঘুরে দাঁড়ালো। আত্রেয়ী গ্যাসের আগুনটা কমিয়ে দিয়ে শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে বলল, —আমি যে তখন দেখলাম শুয়ে আছে।

—না নেই, পাশ বালিশটা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। ঐ অন্ধকার ঘরে তুমি বুঝবে কি করে?

—বাজার-টাজার যায়নি তো… কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল আত্রেয়ী। কারণ তার শ্বশুর যে এখন আর কোথাও বের হয়না সেটা সে ভালো করেই জানে।

বসার ঘরে তুতান সাত সাকালেই টিভি চালিয়ে বসে পড়েছে। টম এন্ড জেরি তার খুব প্রিয় কার্টুন। খিল-খিল হেসে সে সোফায় গড়িয়ে পড়ছে। চিন্তিত মুখে হিমাংশু তার পাশে এসে বসে পড়ল। তুতান টিভির সাউন্ডটা কমিয়ে বলল, —দাদু কোথায় বাবা?

—খুঁজতে হবে বাবা। দাদু লুকিয়ে আছে কোথাও। ছেলের মাথার অবিন্যস্ত চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল হিমাংশু।

—আরিব্বাস! দাদু লুকোচুরি খেলছে? তুতান উৎসাহিত হয়ে বলল।

—তুই যা দিকিনি! তেড়ে উঠল আত্রেয়ী, —সক্কাল বেলা টিভি নিয়ে বসে পড়লেন বাবু। যা পড়তে বস গিয়ে। আমি আর পারি না।

মায়ের বকা খেয়ে তুতান এক দৌড়ে পাশের ঘরে চলে গেল। মাকে চটালে তার কপালে উত্তম-মধ্যম জুটবে সেটা সে জানে। রবিরার মানেই সকালে পাস্তা বা চাউমিন হবে, দুপুরে চিকেন। মা ক্ষেপে গেলে সেটা আর পাওয়া যাবে না।

আনমনে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল হিমাংশু। কপালে চিন্তার ভাজ। আত্রেয়ী জানলার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে চেয়ে রয়েছে। আর পাঁচটা বরিবারের মতন আজও রাস্তায় মানুষের ভিড় একটু বেশী। চেনা পরিচিত অনেকেই হয় বাজারের দিকে যাচ্ছে, না হয় হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফিরছে।

—আচ্ছা সকালে সদর দড়জা কি খোলা ছিল? তুমি কি খোলা দেখেছিলে উঠে? হঠাৎ বলে উঠল হিমাংশু।

—কই নাতো! চোখের কোণ দিয়ে দৃষ্টি দেওয়ালের দিকে করে মনে করার চেষ্টা করে আত্রেয়ী।

—তাহলে বাবা বাইরে যাবে কি করে? উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো হিমাংশু।

—দড়জায় তো ইয়েল লক লাগানো! যে কেউ বাইরে গিয়ে টেনে আবার বন্ধ করে দিতে পারে। আত্রেয়ী মুখ বেঁকিয়ে বলল।

—ও হ্যাঁ, তাইতো! আবার সোফায় বসে পড়ল হিমাংশু। তাহলে বাবা বাইরেই কোথাও গেছে।

সিগারেট পুড়ছে একটু একটু করে। নিকোটিনের গন্ধ আর বুকে চাপ ধরা ধোঁয়ায় ঘর ভরে উঠছে। চিন্তারা জাল বিস্তার করছে তাদের। বাবা যেতে পারে এমন সম্ভাব্য জায়গাগুলো আগে বুঝতে হবে। মনের অতলে তলিয়ে যেতে থাকে হিমাংশু।

—রাণু মাসির বাড়ি একবার ফোন করবে না কি? আত্রেয়ীর কথায় মাটিতে ফিরে এল হিমাংশু।

—রাণু মাসি! আজ প্রায় সাত-আট বছর কোন যোগাযোগ নেই। ওখানে বাবা কি করতে যাবে?

—তোমাদের তো কারোর সাথেই তেমন সম্পর্ক নেই। ওনার নামটা হঠাৎ মাথায় এল তাই বললাম।

—হুম! না না ওখানে যাবে না। নিজের মনেই বলল হিমাংশু।

জানলার ধার থেকে সরে এসে আত্রেয়ী বলল, —চিকেনটা কি হবে? বসাব না তুলে রাখব?

বাবার উপর হঠাৎ খুব রাগ হল হিমাংশুর। রবিবারটাই মাটি করে দিল। পাগল হলে মেনে নেওয়া যায়, একটা সুস্থ মানুষ এমন অবিবেচকের মতন কাজ করলে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটা এ্যাসট্রেতে গুঁজে দিতে দিতে হিমাংশু বলল, —বসিয়েই দাও। ছেলেটা কি দোষ করল! সারা সপ্তাহ স্কুল, টিউশন, সুইমিং, ড্রয়িং, চলছে তো চলছেই। ছুটির দিন এই একটাই পায়। ওকে বঞ্চিত করে লাভ নেই।

রাস্তায় বেড়িয়ে এল হিমাংশু। তাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচটা বাড়ি পরেই বড় রাস্তা। ডানদিকে কিছুটা গেলেই বাজার। মোড়ের মাথায় এসে এদির সেদিক তাকাল হিমাংশু। চলমান মাথার সারি চতুর্দিকে। এমনিতেই লোক চলাচল বেশি এদিকটায়, আর রবিবার হলে তো কথাই নেই। এক মুখ বিরক্তি নিয়ে বাজারের দিকে এগিয়ে গেল সে। বাবা প্রায় তিন-চার বছর বাড়ির বাইরে যায় না। আজ হঠাৎ কি এমন হল? গতকাল হিমাংশুর ফিরতে বেশ রাত হয়েছিল, তার আগে আত্রেয়ীর সাথে কোন ঝগড়া হয়নি তো?

কথাটা মাথায় আসতেই থেমে গেল হিমাংশু। বাবা ইদানিং একটু একগুঁয়ে আর অভিমানি হয়ে গেছে। কারোর সাথেই তেমন কথা বলে না। একরাশ অসহিষ্ণুতা নিয়ে আবার সিগারেট ধরাল সে। বুড়ো লোকগুলোকে নিয়ে এই এক ঝকমারি। নিজেদেরটাই শুধু বোঝে, অপরের সুবিধা অসুবিধাগুলো মূল্যহীন।

বাজারে ঢোকার মুখেই সুবলকে দেখতে পেল হিমাংশু। একটা লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে হেমন্তর চায়ের দোকানের বাইরের বেঞ্চে বসে রয়েছে। হাতে ধরা চায়ের গ্লাসটা এমনভাবে বেঁকে রয়েছে, যে কোন সময় তা থেকে চা গড়িয়ে মাটিতে পড়তে পারে। সুবল খবরের কাগজে ডুবে রয়েছে।

সরু বেঞ্চটার একপাশে বসে হিমাংশু সামনে মেলা খবরের কাগজে টোকা দিয়ে বলল, —হয় চা-টা খা, না হয় কাগজটা পড়। দুটো একসাথে হয় না।

কাগজটা সরিয়ে তাকে দেখে একগাল হেসে সুবল বলল, —আরে আরে, হিমাংশুবাবু যে! অনেকদিন পর দেখলাম যেন!

—সময় হয় না ভাই। তোমাদের মতন সুখের ব্যবসাদার তো নই। দশটা পাঁচটা অফিস করতে হয়, তার উপর ওভারটাইম।

—চা খাবি তো? কথাটা বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই হেমন্তকে ইশারা করল সুবল।

—আজ থাক। একটা বাজে ঝামেলায়… কথাটা শেষ করল না হিমাংশু। বাজে ঝামেলাই তো। হিতাহিত জ্ঞান যার নেই তার জন্য সকালটা নষ্ট কারাকে আর কিই বা বলা যায়?

—এনি প্রবলেম? কি হল বল… সুবল কাগজটা ভাঁজ করে পাশে ফেলে দিয়ে বলল।

—বাবা। সকাল থেকে মিসিং… মানে কোথায় যে গেল…

—সেকি রে! আশেপাশে খুঁজে দেখেছিস?

—দেখলাম তো! বাড়ির বাইরে তো যায় না অনেকদিন হল।

—বৌদির সাথে ঝামেলা? মুচকি হাসল সুবল। হাসিটা খচ্ করে বুকে যেন ছুরি বসিয়ে দেয়। হিমাংশু উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

—আমি কাকা এই জন্যই সোজা বৃদ্ধাশ্রম। কে রোজকার ঝামেলা সামলাবে।

সুবলের কথার উত্তর না দিয়ে হিমাংশু উঠে দাঁড়াল। চায়ের দোকানে আরও কয়েকজন চেনা-অচেনা লোক বসে আছে। হিমাংশুর মনে হল সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে হেমন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, —তুই কি দেখেছিস হেমন্ত?

—না দাদা। আমি তো ভোর পাঁচটায় দোকান খুলি, কাকু এদিক দিয়ে গেলে নজরে পড়ত। অবশ্য মাঝে মাঝে একটু এদিক সেদিক যেতে হয় চা দিতে। তাও মনে হয় এদিকে যান নি।

হিমাংশু বাড়ির দিকে মুখ করল। সুবল সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল, —এটা চলবে তো? নাকি বাবার শোকে এটাও খাবি না!

হাত বাড়িয়ে সিগারেট নিল হিমাংশু। আশেপাশের উৎসুক চোখগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সশব্দে দেশলাইটা জ্বালাল সে।

—দেখ একটু পরেই হয়ত চলে আসবে। না হলে খবর দিস। সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে আবার খবরের কাগজটা তুলে নিল সুবল।

হুঃ! মান সন্মান সব গেল। এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। রাগটা আবার গিয়ে পড়ল বাবার উপর। ঝাড়া হাত-পা, সারাদিন কোন কাজ নেই, দিব্যি সুখের জীবন, কোন অভাব নেই, তাও এমন বালখিল্য আচরন করে কি করে! এই সব ভাবতে ভাবতে বাড়ির সামনে চলে এল হিমাংশু। তুতান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে দেখেই এক লাফে রাস্তায় নেমে এল।

—বাবা দাদু এসেছে।

—কি? নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারে না হিমাংশু। সে যেন আরও বড় কোন ঘটনার জন্য তৈরি হচ্ছিল।

—দাদু ছাদে ছিল। এসেছে।

—ছাদে? তাইতো! এত জায়গায় দেখা হল ছাদটায় তো যাওয়া হয় নি একবার। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়ল হিমাংশুর।

—হ্যাঁ দাদু ছাদে লুকিয়ে ছিল। তুমি কত বোকা। খুঁজে পেলে না। তুমি হেরে গেলে।

—কি হেরে গেলাম? হিমাংশু তেঁতো মুখে বলল।

—তখন বললে না, দাদু লুকিয়ে আছে। তোমরা লুকোচুরি খেলছ। আনন্দে হাততালি দিয়ে লাফিয়ে উঠল তুতান।

—তাই তো, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ইস আমি হেরে গেলাম, কি হবে? তুতানের ছেলেমানুষি হাসিতে সেও যোগ দিল এবার।

—কিচ্ছু চিন্তা নেই তোমার। তুমি যখন দাদুর মতন হবে, আর আমি তোমার মতন। তখন তুমি লুকিয়ে পড়লে আমিও তোমায় মিছিমিছি খুঁজে পাব না। তুমি ঠিক জিতে যাবে।

তুতানের কথাটা বুকের মধ্যে একটা ঢেউ তুলল হিমাংশুর। সুক্ষ্ম একটা খোঁচা লাগল কোথায় যেন। এ কথার উত্তর তার জানা নেই। সে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকাল। বারান্দায় বাবা এসে দাঁড়িয়েছে। তারও মুখে মুচকি হাসি, যেন হিমাংশু কে বলছে, তুইও একদিন জিতবি, চিন্তা করিস না।

 

-- সমাপ্ত --

Comments

Popular posts from this blog

ছুটি

প্রতিশোধ

পরশ পাথর