পরশ পাথর
পরশ পাথর
রাজ চক্রবর্ত্তী
রাজভবন ছাড়িয়ে আসতেই মেঘ ভেঙে জলের ধারা নেমে এল।
কার্জন পার্কের মুখটা অন্ধকার। রূপক
বাধ্য হয়েই পার্কে ঢুকে প্যানিওটি ফাউন্টেনের দিকে ছুটলো। লর্ড কার্জনের সাধের
ফাউন্টেনের উপরের চালাটা যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে।
অন্ধকারে হাতড়ে সিড়ির উপরের ধাপে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল রূপক। চারদিকে আগাছায়
ভর্তি, অথচ কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ সাইটগুলির তালিকায় এটি গ্রেড ওয়ান সৌধ।
একমাত্র সম্বল পঞ্চাশ টাকার নোটটা ভিজেছে কিনা দেখে নিল রূপক। সত্যজিৎ রায়ের
পরশ পাথর সিনেমায় এখানেই পরেশচন্দ্র দত্ত পেয়েছিলেন পরশ পাথর। সেদিনটাও এমনই
বৃষ্টি ছিল। আহা আজ আমি যদি একটি
পেতাম। কথাটা ভেবে ঘুরতেই শক্ত কি যেন পায়ে লাগল রূপকের।
নিচু হতেই একটা ছোট ইঞ্চি তিনেকের পাথরের মূর্তি হাতে উঠে এল। কালচে মূর্তিটা
যে কিসের সেটা বোঝা মুশকিল। বিদ্যুৎ চমকে দেখা গেল মূর্তিটা রোগা পাতলা কোন এক
দেবতার। মাথায় জটা, একটা হাত উপরের দিকে তোলা। কতদিন এখানে পড়ে আছে কে জানে!
ধুলোয় কাদায় একেবারে জবজবে হয়ে রয়েছে। কেবল চোখ দুটো উজ্জ্বল আর টকটকে লাল। এখানে
এটা এল কি করে? পরশ পাথর নয় তো? লোহার কিছু একটা পাওয়া গেলে একবার পরীক্ষা করে
দেখা যেত।
রূপক মাথা ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল। বৃষ্টিটা আগের চেয়ে আরও জোরে শুরু
হয়েছে। আবছা অন্ধকারে একটা ছায়ামূর্তি কখন যেন এসে দাঁড়িয়েছে সিঁড়ির শেষ ধাপে।
—কিছু খুঁজছেন? খ্যানখ্যানে গলায় প্রশ্নটা করল ছায়ামূর্তি।
—ইয়ে মানে লোহার... কথাটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল রূপক।
—লোহা খুঁজছেন? অনেক আছে। ওই যে ও দিকটায়। আসুন।
মূর্তিটাকে আড়াল করে নেমে এল রূপক। যদি সত্যি লেগে যায়, আজ থেকে সে রাজা। আহা!
ঠাকুর মুখ তুলে চাও!
—অনেকেই খোঁজে জানেন?
—কি?
—ওই যে লোহা।
—কেন?
—সোনা করবে বলে। সবাই খুঁজে চলেছে.... পরশ পাথর।
দু’টি ছায়ামূর্তি ঢুকে গেল কার্জন পার্কের গভীর অন্ধকারে। শুধু প্যানিওটি
ফাউন্টেনের সিঁড়ির ধাপে পড়ে রইল একটা পঞ্চাশ টাকার নোট।
দূর থেকে খ্যানখ্যানে গলায় ভেসে এল—
খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।
মাথায় বৃহৎ জটা
ধূলায় কাদায় কটা,
মলিন ছায়ার মতো ক্ষীণ কলেবর।
---- সমাপ্ত ----
Comments
Post a Comment