উৎসর্গ

 উৎসর্গ

স্বরাজবাবু ল্যাপটপটা চালিয়ে দিলেন আগে কাগজ কলমেই লিখতেন বছর খানেক আগে মেয়ে রিয়া এটা কিনে দিয়েছে অবসর নেওয়ার পর কিভাবে সময় কাটাবেন সেটাই চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বারাজবাবুর এতবড় বাড়িতে তিনি একা স্ত্রী যখন চলে গেলেন রিয়ার তখন  বারো বছর বয়েস নিজের দায়িত্বে মেয়েকে মানুষ করেছেন আজ সে জার্নালিজম নিয়ে পড়াশুনা করে দিল্লিতে একটি বিখ্যাত সংবাদপত্রে কর্মরতা কাজেই স্বরাজবাবু এখন মুক্ত

রিয়াই তাকে পথ বাতলেছিল,-আগে তো লেখার চর্চা ছিল তোমার! আবার শুরু করো না সময় কেটে যাবে

তাই করেছেন এই চার বছরে কত নতুন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তিনি কত চেনা অচেনা মানুষ তার কলমের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর লেখা কোন পত্রিকায় বের হলে সবার আগে রিয়া তার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানায় বলে একটা লেখা আমায় উৎসর্গ করো বাবা প্লিইজ!

তাঁর নতুন গল্পটা গতকালই বেড়িয়েছে একটা দৈনিকের রবিবারের পাতায় তাঁর জীবনের একটা ঘটনা নিয়ে লেখা শুধু নাম আর স্থান তিনি পালটে দিয়েছেন তার শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের এর মাত্র পদস্খলন বিয়ের সাত বছর পর অফিসে নির্মলা বলে একটি বিধবা মহিলার সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্যপারটা জানাজানি হতে তিনি নিজেই সরে আসেন সাংসারের জন্য ইতি টানেন ব্যাপারটায় সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেখা

কিন্তু রিয়া কাল তার কোন প্রতিক্রিয়া জানায় নি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন স্বরাজবাবু অস্বস্তি হয়েছে সারাক্ষণ রাতে নিজেই জানতে চান ফোন করে রিয়ার গলার স্বরটা ছিল অন্যরকম সে বলেছিল,-আমি ঘটনাটা জানি বাবা কিন্তু গল্পটা তুমি শেষ করনি, তাই আমি কিছু জানাইনি অপেক্ষা করছি গল্পের শেষটা যদি কোনদিন লেখ

-গল্পের শেষটা! আবাক হয়েছিলেন স্বরাজবাবু

-হ্যাঁ! গল্পটার নাম দিয়েছো মতিভ্রম কিন্তু তোমার মতিভ্রমের জন্য যে দুজন মানুষকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল, কই সেটা তো বলো নি মা আর তোমার সেই নির্মলা দুজনকেই যে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হয়েছিলো, সেটা কোথায়?

স্বরাজবাবু আর কোন উত্তর দেন নি ফোনটা কেটে দিয়েছিলেন আজ তিনি তৈরি পাখার সাথে ঝোলানো দড়িটাও হাসিমুখে তাকে দেখছে শুধু রিয়াকে শেষ জবাবটা দেবেন বলে ল্যাপটপটা চালিয়েছন তাঁর জীবনের শেষ লেখা রিয়াকে তিনি উৎসর্গ করে যাবেন

Comments

Popular posts from this blog

ছুটি

প্রতিশোধ

পরশ পাথর