ক্যানিবালের কবলে
ক্যানিবালের কবলে
রাজ চক্রবর্ত্তী
—ক্যানিবালিস্টিক কথাটার মানে কি স্যার?
ফাঁকা টিচার্সরুমে বসে একমনে পরীক্ষার খাতা দেখছিল দিব্যেন্দু। অন্যমনস্কভাবে জানতে চাইল, —কিসের মানে?
—ক্যানিবালিস্টিক। এর মানে কি স্যার? আবার প্রশ্নটা ভেসে এল।
এবার মাথা তুলল দিব্যেন্দু। সামনে পার্থ দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে।
কাপটা নিতে নিতেই দিব্যেন্দু ভ্রু কুঁচকে বলল, —হঠাৎ এ কথার মানে জানার দরকার পড়ল কেন তোর?
—বলুন না স্যার! আজ হেডস্যারের ঘরে একজন এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন।
—আর তুই আড়ি পেতে শুনছিলিস ওনাদের কথা? কপট রাগ দেখিয়ে বলে দিব্যেন্দু।
—কি যে বলেন স্যার! পার্থ জিভ কাটে। —আমি চা দিতে গিয়েছিলাম কি না! কথাটা কানে এলো।
পরীক্ষার খাতাগুলো সরিয়ে রেখে দিব্যেন্দু অলসভাবে চায় চুমুক দিয়ে বলল, —ক্যানিবালিস্টিক বলতে তাদের বোঝায় যারা স্বজাতীর মাংস খায় বুঝলি! বাঘ, সাপ, মাকড়সা থেকে শুরু করে মানুষেরও বেশ কিছু উপজাতি এর মধ্যে পড়ে।
—মানুষ আবার মানুষের মাংস খায় নাকি স্যার? অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে পার্থ।
পার্থ এই জগন্নাথপুর হাই স্কুলের অস্থায়ী কর্মচারী। সবারই খুব প্রিয়। দোষ একটাই, সব বিষয়ে ওর খুব কৌতুহল। দিব্যেন্দুর বেশ লাগে ছেলেটাকে। ছোট বেলায় সংসারের চাপে পড়াশুনা তেমন করতে পারে নি। কিন্তু ইচ্ছাটা রয়ে গিয়েছে মনের গভীরে। এখন সুযোগ পেলেই তারা বেড়িয়ে এসে সকলকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে। বিশেষ করে দিব্যেন্দুকে।
ঘড়িতে পাঁচটা বাজে। এবার উঠতে হয়! বাকীরা সকলেই প্রায় চলে গিয়েছেন। একটা আড়মোড়া ভেঙে দিব্যেন্দু বলল, —খাতাগুলো আলমারিতে তুলে রাখ পার্থ। কাল আবার নিয়ে বসব। আজ একবার বোনের বাড়ি যাব, ফিরতে দেরী হবে।
আগস্ট মাসের শেষ। বর্ষা এখনও পুরো চলে যায়নি, মাঝে মাঝেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে। জগন্নাথপুরের অধিকাংশ অঞ্চলই জলের তলায়। টাউনের দিকটা এখনও কোনমতে বেঁচে রয়েছে। এদিকে বিদ্যাধরি ফুঁসছে, আর দিন সাতেক এইভাবে চললে কি অবস্থা হবে বলা খুব মুশকিল!
দিব্যেন্দু স্কুলের কাছেই একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। সংসারে আপনজন বলতে মা আর বোন। বোনের বিয়ে দিয়েছে দু’বছর হল। মাঝেমধ্যে ভাল-মন্দ রান্না হলেই দাদার ডাক পড়ে। আজও সেই কারণেই যাওয়া। কাজেই খাতাগুলো বয়ে বেড়ানোর কোন মানে হয় না।
গতকাল ফিরতে অনেক রাত হয়েছে দিব্যেন্দুর। সকালে মায়ের ডাকে যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁয়েছে। বাইরে মেঘলা আকাশ। সারারাত বৃষ্টির পর ক্লান্ত বরুণ দেব একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন।
আজ প্রথম দু’টো পিরিয়ড অফ আছে দিব্যেন্দুর। সে স্কুলে যেতেই হেডস্যার তাকে ডাকলেন। রেজিস্টারে সই করে সে আগে ছুটলো স্যারের সাথে দেখা করতে।
প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ সান্যাল রাশভারী মানুষ। চশমার ফাঁক দিয়ে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে চোখের ইশারায় বসতে বলে খুব উত্তেজিত গলায় বললেন, —খবর শুনেছ?
—কি খবর? আমতা আমতা করে দিব্যেন্দু।
—আহ্! এই তোমাদের দোষ। বেলা ন’টা অবধি পড়ে পড়ে ঘুমালে আর জানবে কি করে! বিদ্যাধরির পাড় ধসে কি অবস্থা একবার দেখ গিয়ে।
—কোথায়? আবার প্রশ্ন করে দিব্যেন্দু।
—জগন্নাথপুর রথতলার ওপাশে। যা-তা অবস্থা। শ্মশানের দিকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শ্মশানের অনেকটাই শুনলাম জলের তলায়।
—হ্যাঁ! সেকি! চমকে ওঠে দিব্যেন্দু। চমকে ওঠার কারণ, ইতিহাসের শিক্ষক উৎপল চাকলাদারের বাড়ি শ্মশানের খুব কাছেই। তিনি দিব্যেন্দুকে খুব স্নেহ করেন।
—উৎপলবাবু ঠিক আছেন তো? দিব্যেন্দু জানতে চায়।
—তিনি ঠিকই আছেন। আমাদের পার্থর বাড়িও ওদিকেই। উৎপলবাবুই তো পার্থকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। তুমি অবশ্য তখনও জয়েন কর নি।
—ও, তা এই জন্যই কি আমাকে ডেকে...
দিব্যেন্দুকে মাঝপথে থামিয়ে হেডস্যার বললেন, —না হে, তার জন্য নয়! পার্থকে কাল রাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর বাবা সকালে আমার কাছে এসেছিলেন। তার কাছেই আমি সব শুনলাম।
একটু থেমে আবার বললেন, —তোমার সঙ্গে তো পার্থ সবসময় লেগে থাকত। কাল সবাই চলে যাওয়ার পরও তুমি তো স্টাফরুমে বসে কাজ করছিলে। পার্থও তো তোমার সাথেই ছিল। হরেন আমাকে বলল, ও ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে তোমাদের একসাথে দেখেছে।
—হ্যাঁ তা ছিল বটে। একটু চিন্তা করে বলল দিব্যেন্দু।
—তা তখন তোমাকে কিছু বলেছে-টলেছে? মানে কোথাও যাবে বা সেরকম কিছু?
—নাহ্! তেমন কোন কথা হয়নি স্যার।
—ছেলেটা তো তেমন নয়। এত দায়িত্ববোধ! ওকে তো দেখছি আজ তিন বছর। এমন কেয়ারলেসের মতন কাজ ও করে কি করে? বাড়িতে একবার জানাবে না?
—ফোন করলেই তো হয় স্যার? হঠাৎ সমস্যার সমাধানের সহজ পথ যেন পাওয়া গেছে এমন ভাব করে প্রায় চিৎকার করে ওঠে দিব্যেন্দু।
—সে চেষ্টা কি হয়নি মনে করেছ! কাল রাত থেকেই ওর মোবাইল সুইচ অফ।
দিব্যেন্দু আবার মুষড়ে পড়লো। কাল সে যখন পার্থকে খাতাগুলো রাখতে বলে উঠে গেল তখনও তো পার্থ সুস্থ স্বাভাবিকই ছিল। তবে গেল কোথায়?
—এদিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া থেকেও কয়েকদিন শ্মাশানে খোঁড়াখুড়ি চলছে জান তো?
—হ্যাঁ স্যার। আমি তো দু’তিনবার গেছিও দেখতে।
—ওদের বেশ কিছু জিনিসপত্রও জলে ভেসে গিয়েছে। আমার এক বন্ধু আছে ওই টিমে। কালই এসেছিল দেখা করতে…
—স্যার! মাঝপথে বলে ওঠে দিব্যেন্দু। —কাল পার্থ আমার কাছে হঠাৎ ক্যানিবালিস্টিক এর মানে জানতে চেয়েছিল!
—ক্যানিবালিস্টিক? অবাক চোখে চাইলেন অরবিন্দবাবু।
—হ্যাঁ! বলল আপনার ঘরে চা দিতে এসে শব্দটা শুনেছে। একজন নাকি এসেছিলেন আপনার সাথে দেখা করতে, তিনিই বলছিলেন। এখন মনে হচ্ছে আপনার বন্ধুই হবেন বোধহয়!
—ও ইয়েস! কিন্তু তার সাথে পার্থর উধাও হওয়ার কি সম্পর্ক? গম্ভীর মুখে বললেন অরবিন্দ সান্যাল।
—না তা নেই! তবে হঠাৎ মনে পড়ল তাই…
—তুমি এখন এস। ক্লাসে যাও। পার্থকে স্কুলে কাল শেষ তোমার সাথে দেখ গিয়েছিল তাই তোমাকে ডেকেছিলাম, যদি তুমি কিছু বলতে পার। কিন্তু তুমি যখন কিছুই জান না তখন… আচ্ছা তুমি যাও। টেবিলে খোলা ফাইলটাতে আবার মনযোগ দিলেন হেডস্যার।
সারাদিন নানান কাজের মাঝে পার্থ হারিয়েই গেল মন থেকে। বিকালে পরীক্ষার খাতাগুলো নিয়ে বসতেই আবার তার অনুপস্থিতি টের পেল দিব্যেন্দু। স্কুলের কাছেই বাড়ি হওয়ায় এবং সে অকৃতদার বলে পার্থ একটু দেরি করেই স্কুল থেকে বের হয়। সবাই চলে গেলে তাকে চা জোগান দিত পার্থ। ডেকে বলতেও হত না। কথাটা মনে হতেই খাতা দেখার উৎসাহটা চলে গেল দিব্যেন্দুর।
ছেলেটা গেল কোথায়? এরকম তো কখনও হয়নি। কাল বিকালেও তাকে দেখে অস্বাভাবিক লাগেনি একফোঁটা। মনের কথা পার্থ সবই তাকে বলত। বাড়িতে অশান্তি কিংবা স্কুলে কারো কথায় আঘাত পেলে দিব্যেন্দুর কাছে এসে সব খুলে বলে দিত। বন্ধু-বান্ধব বিশেষ নেই পার্থর, সেটাও জানে দিব্যেন্দু। স্কুলের লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে বাড়িতে পড়ত অবসর সময়। এমন একটা ছেলে হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?
মনটা ভাল লাগছিল না দিব্যেন্দুর। একে বন্যায় জগন্নাথপুরের এই জটিল অবস্থা, তার উপর বিদ্যাধরি নদীর প্রলয় রূপ। পাড় ভাঙতে ভাঙতে সে এগিয়ে আসছে লোকালয়ের দিকে। এর উপর আবার পার্থর এইভাবে উধাও হয়ে যাওয়া।
দিব্যেন্দু উঠি উঠি করছে এমন সময় উৎপলবাবু এসে টিচার্সরুমে ঢুকলেন। ইতিহাসের শিক্ষক উৎপলবাবু বয়েসে প্রবীণ। স্কুলে সবাই তাঁকে খুব সমীহ করে চলে। দিব্যেন্দু উঠে দাঁড়াতেই উৎপলবাবু বললেন, —এই যে দিব্যেন্দু রয়েছ দেখছি! আমার আজ অনেক দেরি হয়ে গেল। হেডস্যারের সাথে একটা জরুরী আলোচনা চলছিল।
—হ্যাঁ! আমি একটু দেরি করেই বের হই স্যার। হেসে বলল দিব্যেন্দু।
—এই বুড়োটাকে যে একটু এগিয়ে দিতে হবে! চোখে ভাল দেখি না। অপারেশনটা করাব করাব করেও হয়ে উঠছে না। তোমার অসুবিধা না হলে…
—কি বলছেন স্যার! আমার সৌভাগ্য।
—চল তাহলে দেরি করে লাভ নেই। আমাদের ওদিকটার কথা তো শুনেছো!
—হ্যাঁ স্যার শুনলাম, খুব খারাপ হয়েছে।
—কখন নদী এসে বুকে টেনে নেবে কে জানে! নদী মাতৃক দেশ আমাদের। মায়ের বুকেই হারিয়ে যাব কোনদিন নিশ্চিন্তে।
স্কুল থেকে উৎপলবাবুর বাড়ি প্রায় দুই কিলোমিটার। এতটা পথ হাঁটতে পারবেন কি না জানতে চাওয়াতে বললেন, —রোজ তো হেঁটেই যাওয়া আসা করি। নেহাত চোখটা নষ্ট, না হলে…
চুপচাপ হাঁটছিল দিব্যেন্দু উৎপলবাবুর পাশে। পার্থর অন্তর্ধানটা নিয়ে মনে মনে ঘাঁটছিল সে। উৎপলবাবুর একটা হাত শক্ত করে ধরা দিব্যেন্দু হাতে। কিছুটা পথ আসার পর উৎপলবাবু বললেন, —কি ভাবছ দিব্যেন্দুবাবু? পার্থর কথা বোধহয়, তাই না?
—হ্যাঁ স্যার। কি যে হল ছেলেটার!
—কার যে কখন কি হয়! মানুষের চরিত্র বড় জটিল। একটু থেমে কি যেন ভেবে আবার বললেন, —আমাদের শ্মশানে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাজ হচ্ছে শুনেছো আশা করি!
—হ্যাঁ জানি তো।
—আমি পার্থকে দিন সাতেক আগে ওখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি।
অবাক হয়ে তাকালো দিব্যেন্দু। তারপর মনে হল, ছেলেটার সব বিষয়ে এত আগ্রহ। হয়ত সেই কারনেই ওখানেও গিয়ে জুটেছিল। কিন্তু পার্থ তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি তো!
উৎপলবাবু বাড়িতে ঢোকার জন্য অনেকবার বললেন। দিব্যেন্দু সবিনয়ে এড়িয়ে গেল। কারো বাড়িতে গিয়ে কিছু খাওয়ার কথা উঠলে সে খুব অস্বস্তি বোধ করে।
ফেরার পথে কিছুটা আসার পর ডানহাতে সরু মাটির একটা পথ এঁকে-বেঁকে চলে গিয়েছে শ্মশানের দিকে। দিব্যেন্দু পাকা রাস্তা ছেড়ে মাটির পথটা ধরল। একবার শ্মশানটা ঢুঁ মেরে দেখা যাক, যদি পার্থর কোন সন্ধান পাওয়া যায়।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ক্যাম্পটা শ্মশানে ঢোকার মুখেই। কিন্তু সেখানে কাউকেই দেখা গেল না। পাঁচ মাস আগে একদিন শ্মশানের পাশে একটা জলাশয় তৈরীর সময় এক অদ্ভুত দর্শন মানুষের কঙ্কাল আর কিছু গয়না উঠে এসেছিল। খবর যায় কলকাতায়। তারপরই এই ক্যাম্প করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খোঁজার কাজ শুরু হয়।
ক্যাম্পটাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল দিব্যেন্দু। নদীর গর্জন এত দূর থেকেও কানে আসছে। সেই সঙ্গে পাড়ের মাটি জলে খসে পড়ার করুন শব্দ। নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালো দিব্যেন্দু। জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর শির-শির করে উঠছে।
শ্মশান চত্বরটা পুরো ফাঁকা, জন মানুষের চিহ্ন নেই কোথাও। কাঁধে ঝোলান সাইড ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে যত দূর আলো যায় ঘুরিয়ে দেখল দিব্যেন্দু। আগে বেশ কয়েকটা কুকুর থাকতো এখানে। তাদের একটাকেও দেখা গেল না আজ আশাপাশে।
আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গিয়েছে। চাঁদের ক্ষিণ আলো যেটুকু এতক্ষণ ছিল তাও ঢাকা পড়ল মেঘের আড়ালে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে উঠছে। চারপাশটা আলোকিত হয়ে উঠছে কয়েক মুহূর্তের জন্য। বেশ দূর পর্যন্ত দৃশ্য চোখের সামনে জ্বলে উঠছে দু’তিন সেকেন্ড। যেন রাতের অন্ধকারে ফ্ল্যাশে ছবি তোলা হচ্ছে। আবার সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তকাল পরেই।
দিব্যেন্দু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল একপাশে। ক্যাম্পের লোকগুলো থাকলে তাও খোঁজ করা যেত তাদের কাছে। তারা মনে হয় অবস্থা বেগতিক দেখে টাউনে পালিয়েছে। অগত্যা! এখানে দাঁড়িয়ে আর কোন লাভ নেই। দিনের বেলা ছাড়া কাউকে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ফেরার পথ ধরল দিব্যেন্দু।
নদীর গর্জনের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে একটানা মেঘের ডাক। গম্ভীর সে ডাক আকাশের এমাথা থেকে ওমাথা গড়িয়ে যাচ্ছে। আর লক্ষ ওয়াটের আলো যেন জ্বলে উঠছে কিছুক্ষণ পরপর। ফেরার পথে ক্যাম্পটার কাছে এসে দিব্যেন্দু একবার হাঁক দিল, —কেউ আছেন?
কোন সাড়া নেই। ভিতরটা অন্ধকার। টর্চের আলো ফেলল দিব্যেন্দু। হঠাৎ কি যেন একটা সরে গেল বলে মনে হল। —কে? আবার জোরে চিৎকার করল সে।
কেউ না। হয়ত কোন জন্তু হবে! না হয় চোখের ভুল। আরও কিছুক্ষণ ইতি-উতি আলো ফেলে দিব্যেন্দু ঘুরে দাঁড়ালো। শ্মশানের চারদিকটা বর্ষার জঙ্গলে ভরে রয়েছে। বিষাক্ত সাপ-খোপ থাকতে পারে। পা চলিয়ে হাঁটতে শুরু করলো সে।
মাটির পথটা এখন কাদায় ভরা, সেই সঙ্গে পিছলও বটে। কিছুটা আসার পর মনে হল পিছনে আর একটা পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সে থেমে যেতেই আওয়াজটাও থেমে গেল। ঘুরে একবার দেখল দিব্যেন্দু। কোন মতে পা ফেলে এখানে থেকে বেড়িয়ে যাওয়াই এখন বুদ্ধিমানের কাজ।
মোবাইলটা বেজে উঠল দিব্যেন্দুর। টিপ-টিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সঙ্গে দমকা হাওয়া। এক হাতে ধরা ছাতাটা আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনমতে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে কানে দিল সে।
—হ্যালো।
—দিব্যেন্দু আমি হেডস্যার বলছি।
—হ্যাঁ স্যার বলুন, বুঝতে পেরেছি।
—তুমি কোথায়?
—আমি উৎপলবাবুকে বাড়িতে দিয়ে ফিরছি।
—একটা খারাপ খবর আছে।
—কি? গলাটা কেঁপে গেল দিব্যেন্দুর।
—আমার বন্ধুর কথা বলেছিলাম না, যে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে..
—হ্যাঁ স্যার বুঝেছি। তাঁর কি হল?
—তাঁর কিছু হয়নি। তাদের সংগ্রহ করা কিছু নিদর্শন কাল রাত থেকে মিসিং। পার্থ নাকি মাঝে মাঝে ওদিকে ঘুরঘুর করত। এখন আমাকে ফোন করে পার্থর খোঁজ করছে। আমি তো আচ্ছা বিপদে পড়লাম।
হেডস্যার আরও কিছু বলে চললেন। সে কথাগুলো দিব্যেন্দুর কানে আর ঢুকলো না। পার্থ তাহলে কাল রাতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো চুরি করে গা ঢাকা দিয়েছে! হয়ত কলকাতা পালিয়েছে! পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ওপাশে তখনও কথা চলছে। আবার মন দিল দিব্যেন্দু।
—হ্যাঁ স্যার বুঝতে পারছি।
—আমি থানায় খবর দিয়েছি। বড়বাবুর সাথে আমার ভালোই পরিচয় আছে। আমরা পার্থর বাড়িতে যাব।
—আচ্ছা স্যার। আমায় কি করতে হবে?
—তোমাকেও হয়ত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কারণ কাল তুমিই শেষ ওকে এখানে দেখেছ, আমি সেটা পুলিশকে বলেছি। কি ঝঞ্ঝাট বল তো!
সত্যিই উটকো ঝামেলা। কিন্তু পার্থ এমন কাজ করতে পারে এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। উৎপলবাবু বলছিলেন, কার যে কখন কি হয়। মানুষের চরিত্র বড় জটিল। কথাটা কানে বেজে উঠল দিব্যেন্দুর।
—আমি স্যার শ্মশানের কাছেই আছি। মানে.. শ্মশানের ভিতরেই।
—সেকি! তুমি কি করছো ওখানে এখন। নাহ্! তোমাদের নিয়ে আমি আর পারি না। সব এক একটা কান্ড করবে… হেডস্যারের গলায় স্পষ্ট বিরক্তি।
—তা আর কেউ দেখেছে তোমাকে ওখানে যেতে?
—তা জানিনা স্যার। আমি তো নিজের খেয়ালেই চলে এসেছি।
—তুমি দেখছি কিছুই জাননা। জ্বালালে বাবা! আমি রাখছি।
ফোনটা কেটে দিলেন হেডস্যার। ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে গিয়েছিল দিব্যেন্দু। তার সঙ্গে পার্থর ঘনিষ্ঠতা সবাই জানে। পার্থ যদি সত্যিই চুরি করে পালিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তার আঁচ দিব্যেন্দুর গায়েও এসে পড়বে। কি করা উচিত এখন?
অন্যমনস্কভাবে পা ফেলছিল দিব্যেন্দু। সারা শরীরে একটা অবসন্নতা। সম্বিত ফিরে পেল আকাশে আলোর ঝলকানিতে। তার সামনে কয়েক হাত দূরে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাতিতে তার সারা শরীর ঢাকা।
—কে? অস্ফুটে বলল দিব্যেন্দু।
আগন্তুক কোন সাড়া দিল না। টর্চের আলো ফেলল দিব্যেন্দু শরীরটার উপর। একটা ডুমুর গাছ। তার উপর কেউ প্লাস্টিক ফেলে রেখে গেছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে। হাঁফ ছাড়ল দিব্যেন্দু। পরিবেশ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। হেডস্যারের ফোনটা পাওয়ার পর থেকে দিব্যেন্দু আরও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে।
একসময় শ্মশানের মেঠো পথ ছেড়ে আবার পাকা রাস্তায় উঠে এল দিব্যেন্দু। অন্যদিন লাইট পোস্টের আলোগুলো জ্বলে, আজ সব নেভানো। হয়ত বৃষ্টির জন্য জ্বালায়নি! রাস্তাটা অন্ধকারের চাদরে ঢেকে রয়েছে।
এদিকে গাড়ি-ঘোড়া প্রায় চলে না বললেই হয়। রাস্তার একপাশ দিয়ে ক্লান্ত পায়ে বাড়ির দিকে এগোতে থাকে দিব্যেন্দু। মাথায় এক ঝাঁক প্রশ্ন কিলবিল করছে।
হঠাৎ তীব্র একটা আলো এসে চোখ ধাঁধিয়ে দিল দিব্যেন্দুর। দু’হাত দিয়ে চোখ ঢেকে দিল সে। পুলিশের গাড়ি কি? হাতের আড়ালে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করে সে।
আলোটা বেশ কিছুটা দূরে স্থির হয়ে রয়েছে। আবার কোন ভ্রান্তি? আলোটা তার মুখের উপর থেকে সরছে না। যেন একটা আগুনের গোলা গিলতে চাইছে তাকে।
—কে? আর থাকতে না পেরে গলা তুলল দিব্যেন্দু।
—ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। উত্তর এল কাঁপা গলায়।
—কে আপনি? আলোটা সরান।
—আমি পার্থ।
—পার্থ! অবাক হয়ে গেল দিব্যেন্দু। —আলোটা নেভা পার্থ। আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি না।
—দরকার নেই।
—এটা তুই কি করলি পার্থ! চুরি করলি শেষটায়? গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করে দিব্যেন্দু।
—পয়সার জন্য। সবার টাকার দরকার। এভাবে আর কতদিন থাকবো।
—তাই বলে চুরি করবি? আমরা সবাই তোকে কত ভালবাসতাম!
দু’পা এগিয়ে যায় দিব্যেন্দু। যে ভাবেই হোক ওর কাছে পৌছতে হবে। কথায় ভুলিয়ে ওকে ধরতে হবে।
—থাক না! অন্য কথা বলুন। ভালবাসায় পেট চলে না।
—তাহলে এখানে এলি কেন আবার? পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলিস তুই?
—লুকিয়ে ছিলাম গোপন ডেরায়। এলাম যদি আরও কিছু পাওয়া যায়। বিদ্যুতের চমকানিতে পার্থর বর্ষাতি ঢাকা শরীরটা এক ঝলক দৃশ্যমান হয়ে আবার মিলিয়ে গেল।
দুজনের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে। দিব্যেন্দু নিজেকে প্রস্তুত করে সম্মুখ সমরের জন্য। যে করেই হোক ওকে আটকাতে হবে।
—আমার কথা শোন পার্থ। এভাবে পালিয়ে তুই বাঁচতে পারবি না। ওগুলো সব সরকারের সম্পত্তি। তুই ফিরিয়ে দে।
পার্থ চলে এসেছে হাতের নাগালের মধ্যে। দিব্যেন্দু তৈরী হয় ওর উপর ঝাঁপিয়ে পরার জন্য। হঠাৎ আলোটা নিভিয়ে দেয় পার্থ। দিব্যেন্দু দু’হাত প্রসারিত করে লাফ দেয়, কিন্তু সামনেটা ফাঁকা। দিব্যেন্দু মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে। প্রচন্ড আক্রোশে পার্থ ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর।
দিব্যেন্দু নিজেকে সামলে নেওয়ার আগেই তার কানে সজোরে কামড় বসিয়েছে পার্থ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দিব্যেন্দুর একটা কান ছিঁড়ে চলে যায় পার্থর মুখে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। অন্ধকারেও দিব্যেন্দু বুঝতে পারে এ পার্থ নয়। পার্থর বয়েস এখন কুড়ি। আর যে এখন সামনে রয়েছে সে পূর্ণাঙ্গ একজন বয়স্ক মানুষ। দিব্যেন্দু এক হাতে ক্ষতস্থানটা ধরে উঠে বসতে চায়। ততক্ষণে আগন্তুকের ধারালো দাঁত নেমে এসেছে তার নাক লক্ষ্য করে।
আদিম উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে সে। ছিঁড়ে ফেলতে থাকে নিজের গায়ের জামা। অন্ধকারে ঘষটে দূরে সরে যেতে চায় দিব্যেন্দু। কিন্তু কিছুটা এগিয়েই সে আবার বাধা পায়। অন্ধকারেও সে বুঝতে পারে সামনের আগন্তুক এখন সম্পুর্ন উলঙ্গ। ধারালো হাতের আঙুল সে বিধিয়ে দিচ্ছে দিব্যেন্দুর পিঠে। জোরে পা দিয়ে লাথি মারে দিব্যেন্দু। একটা ফাঁক তৈরী হয়, তাতেই কোন মতে উঠে দাঁড়ায় সে। দূর থেকে দুটো আলো ভেসে আসছে। কোন গাড়ি কি? হে ভগবান বাঁচাও!
পিছনে আবার একটা চাপ অনুভব করে সে। পিশাচটা তার পিঠ লক্ষ্য করে দাঁত বসিয়েছে এবার।
কোনদিকে তাকানোর অবকাশ নেই। সামনে দিয়ে আসা গাড়ির আলোটার দিকে দু’হাত তুলে চিৎকার করতে থাকে দিব্যেন্দু, —হেল্প! হেল্প!
পিছনের পৈশাচিক চিৎকারটাও সমান তালে চলছে। পিঠের এক খাবলা মাংস তখন তার মুখে। চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দিব্যেন্দু। বাধা দেওয়ার শেষ ক্ষমতাটুকুও তখন তার চলে গিয়েছে। তার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে আসে, —ক্যানিবাল।
গাড়িটা আরও কাছে চলে এসেছে। হেডলাইটের আলোয় আস্তে আস্তে উদ্ভাসিত হচ্ছে পিশাচটার মুখ। উলঙ্গ শরীরটা এসে বসেছে দিব্যেন্দুর বুকের উপর। তার মুখ তাজা রক্তে রাঙা। তার লক্ষ এবার দিব্যেন্দুর চোখ। হাত দুটো মাথার উপর উঠে হিংস্র গতিতে নেমে আসতে থাকে দিব্যেন্দুর চোখের দিকে…
পরপর তিনটে বুলেটের শব্দে রাস্তার পাশের গাছগুলো থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি উড়ে গেল আকাশে। একই সঙ্গে জোরালো টর্চের আলো এসে পড়ে দিব্যেন্দুর বুকে বসা পিশাচটার উপর। গুলিবিদ্ধ শরীরটা ক্রমশ ঢলে পড়ছে দিব্যেন্দুর উপর। জ্ঞান হারাবার আগে দিব্যেন্দু অবাক হয়ে দেখে আগন্তুককে। উৎপলবাবু। ইতিহাসবিদ উৎপল চাকলাদার।
উৎপল চাকলাদার ছিলেন যযার্থ জ্ঞানী পুরুষ। ইতিহাসচর্চাই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। তাঁর রিসার্চের বিষয় ছিল নিয়ানডার্থাল। বর্তমান মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ের প্রজাতি হচ্ছে নিয়ানডার্থাল। আজ থেকে অনুমানিক ত্রিশ কি চল্লিশ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় এই প্রজাতি।
জগন্নাথপুর শ্মশানে যখন এক অদ্ভুত দর্শন কঙ্কাল আর গয়না উদ্ধার হয়, তখন এক নজর দেখেই উৎপলবাবু বুঝেছিলেন সেটা নিয়নডার্থাল প্রজাতির মানুষের। যদিও সেটা কিভাবে এখানে এল তা তাঁর কাছ পরিষ্কার হয় না। প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ উৎপলবাবু নিজের কাছে নিয়ে আসেন কঙ্কাল আর গয়নাগুলো।
রাত জেগে শুরু হল পড়াশুনা। এর পরেই তাঁর মধ্যে আস্তে আস্তে কিছু পরিবর্তন দেখা দিল। সন্ধ্যার পর তিনি খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠতে থাকেন। রাতে গয়নাগুলো পড়ে আয়নার সামনে বসে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। চেয়ারে কঙ্কালটাকে বসিয়ে তার দিকে চেয়ে থাকতেন অপলক দৃষ্টিতে। তাঁর মেয়ে নিজে একথা পরে পুলিশকে জানিয়েছে।
এরপর ক্যাম্প করে শুরু হয় খোঁড়ার কাজ। আরও কিছু গয়না ও আনুসঙ্গিক জিনিস উদ্ধার হয়। কিন্তু সেগুলি চেয়েও উৎপলবাবু আর পান নি। উল্টে তাঁকে কঙ্কাল ও গয়নাগুলি ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। এরপর তিনি একটা ফন্দি আঁটেন। পার্থকে কাজে লাগিয়ে তিনি ক্যাম্প থেকে বাকি জিনিসগুলি হাত করেন। সহজ সরল অনুসন্ধিৎসু পার্থকে হাত করতে তাঁর বেশি বেগ পেতে হয়নি।
তিনি ভিতরে ভিতরে তখন উন্মাদ। নিয়ানডার্থাল নিয়ে দীর্ঘদিনের চর্চা তাকে নরমাংস খাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু উপায় নেই। উপায় এসে গেল সেই পার্থর হাত ধরেই। এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন তিনি। সেই রাতেই জিনিসগুলো হাত করে কোন এক নির্জন স্থানে তিনি পার্থকে খুন করে সম্ভবত নিজের অনেক দিনের ইচ্ছা পুরণ করেন। আবার ঘুরিয়ে পার্থকেই চোর প্রতিপন্ন করেন। পরে পার্থর আধখাওয়া শরীর পুলিশ উদ্ধার করে শ্মশানের পিছন দিকের একটা জঙ্গলে রাখা ট্রাঙ্ক থেকে। কোন কৌশলে তিনি পার্থকে খুন করেন তা জানার কোন উপায় এখন আর নেই।
সম্ভবত নর মাংস খাওয়ার পরেই তার শরীরে আগের থেকে অনেক বেশি শক্তি সঞ্চারিত হয়। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে দিব্যেন্দুর উপর হামলার সময় তার শারীরিক ক্ষমতা থেকে। ঘটনার দিন উৎপলবাবু সম্ভবত পার্থর শরীরের অংশ খেয়েই ফিরছিলেন। পথে দিব্যেন্দুকে দেখতে পেয়ে তাকেও মেরে খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঠিক সময় পুলিশের গাড়ি না এলে হয়ত দিব্যেন্দুকেও আস্তে আস্তে খেয়ে ফেলতেন উৎপল চাকলাদার। মানসিক বিকৃতি একজন স্বাভাবিক মানুষকে যে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এই ঘটনা থেকে তা বোঝা যায়।
উৎপল চাকলাদারের দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করে নিয়নডার্থালের সাথে তার মিল পাওয়া যায়। হয়ত উৎপলবাবু এই প্রবৃত্তি বংশ পরম্পরায় বহন করেছেন। নিয়নডার্থালদের নিয়ে রিসার্চ, ডিএনএ –র মিল আর হঠাৎ মানসিক বিকৃতি, তিনে মিলে এই ঘটনার জন্ম দিয়েছিল।
সুস্থ হয়ে দিব্যেন্দু তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছে। আজ স্কুলে তার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পার্থর বাবার হাতে এই বই বিক্রির যাবতীয় অর্থ তুলে দেওয়ার অঙ্গিকার করে সে। মঞ্চে রাখা পার্থর বাঁধানো ছবিতে মালা দিয়ে প্রাণাম করল দিব্যেন্দু। পার্থ ছবিতে মিটিমিটি হাসছে।
--- সামপ্ত ---
Comments
Post a Comment