গৃহবন্দী

 


সন্ধ্যাবেলা সবেমাত্র চায়ের কাপে মুখ দিয়েছে সুবিমল, তখনই ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল। হঠাৎ করে অন্ধকার নেমে আসাতে প্রথমটা সে একটু চমকেই উঠল। এই অসময়ে তো কারেন্ট অফ্ হয় না কখনও। সেও আবার এই করোনা আতঙ্কের সময়! এমনিতেই এখন সবকিছু বন্ধ চারিদিকে। হাতের আন্দাজে সুবিমল চায়ের কাপটা টি-টেবিলের উপর নামিয়ে রাখল। আশা এখনও তার কাপটা নিয়ে ঘরে আসেনি। গলাটা একটু উঠিয়ে সুবিমল বলল, - দেখ অন্ধকারে আবার বেসামাল হয়ে যেও না। ইনভার্টারটা কি হল! সেটা তো আপনা থেকেই জ্বলে যাওয়ার কথা।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আশা ঘরে ঢুকে বলল, - সেটা তো আজ দুদিন দেহ রেখেছে! পরশু থেকে কতবার বলেছি, মনে নেই তোমার? আজকাল কিছুই দেখছি আর মনে রাখতে পারছনা!

ও হ্যাঁ! আশা বলেছে বটে। সুবিমলের মনে পড়ল। মাথাটা পিছনের দিকে একটু কাত করে সে বলল, - তা মোমবাতি নেই ঘরে একটাও? বেশ একটা ক্যান্ডেল লাইট টি-পার্টি হয়ে যেত

উল্টো দিকের সোফায় আলগোছে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে আশা বলল, - না! ঘরে রাখা হয় কই! কারেন্টতো যায়ই না বলতে গেলে। আর গেলেই ইনভার্টার। মনেও নেই মোমবাতির কথা।

- হুম! তা ঠাকুর ঘরেও কি নেই? না হয় তোমার ঠাকুরের প্রদীপটাই একটু নিয়ে এসে টেবিলে জ্বাল না!

- ওমা! কি অলুক্ষণে কথা দেখ! এই দুঃসময়ে এই সব রসিকতা মোটেও ভাল লাগে না আমার।

অন্ধকারে চোখ অনেকটা সয়ে গেছে এখন। কিন্তু তাই বলে আঁধার ঘরে ভুতের মতন বসে চা খাওয়াও তো যায় না। উঠে ঘরের পর্দাগুলো সরিয়ে দিল সুবিমলকাল অমাবস্যা গেছে, কাজেই বাইরেও চাঁদের আলোর কোন আশা নেই। লকডাউনের কল্যানে বাতাস এখন অনেক বিশুদ্ধ। খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে দু-বার শ্বাস নিল সুবিমল। আশেপাশের বাড়িগুলোর প্রায় সব কটাতেই এখন ইনভার্টার রয়েছে। আলো জ্বলছে সবার বাড়িতেই। একটু ইর্ষান্বিত হয়েই সেদিকে চোখ বোলাল সে।

- কি হল! চা যে জল হয়ে গেল

- যাই

সোফার কাছে সবে ফিরে এসেছে সুবিমল, হঠাৎ দড়জায় যেন একটা মৃদু ধাক্কা দেওয়ার শব্দ শুনতে পেল সে।

- কে যেন দড়জা ধাক্কা দিল না? কান খাড়া করল সুবিমল।

আশা অলস হাতে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিচ্ছিল। হঠাৎ প্রশ্ন শুনে নড়েচড়ে বসল।

- কই না তো।

- হ্যাঁ! মনে হল যেন! অন্ধকার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে সুবিমল ঠাহর করার চেষ্টা করল আবার।

আবার একটা মৃদু শব্দ হল দড়জায়। এবার আশাও সচকিত হয়ে উঠল।

- হ্যাঁ! দড়জায় আওয়াজ হচ্ছে বলেই তো মনে হয়।

- তবে! তোমার কর্তার স্মৃতিশক্তি ইষৎ গোলমাল করলেও; শ্রবণেন্দ্রিয়টি এখনও মরচে ধরে যায়নি, কি বল?

নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল সুবিমল। আশাও যোগ দিল সেই হালকা রসিকতায়। কিন্তু পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে গেল সুবিমলের

- কিন্তু এখন তো কারো আসার কথা নয়। গাড়িঘোড়া বন্ধ। রাস্তাঘাট শুনশান। তবে কি পাড়ার কেউ?

- আহা! দেখই না! আশা সোজা হয়ে বসে বলল, - তবে কাউকে যেন ফস করে ঘরের ভিতরে এনে বসিও না। খেয়াল রেখ সেটা। ছেলে রোজ দুবেলা ফোন করে কি বলছে, মনে  থাকে যেন।

- আচ্ছা আচ্ছা। জানি রে বাবা। আমাকে কি অতই আহাম্মক ভেবেছ, না কি? এবার একটু বিরক্ত হয় সুবিমল।

সুবিমলদের বাড়িটা বেশ পুরানো আমলের। বসার ঘর পেরিয়ে চওড়া বারান্দা, তার পর কিছুটা জায়গা নিয়ে ছোট একটা বাগান। রিটায়ার করার পর গত তিন বছর সুবিমলের দিনের একটা বড় অংশ এই বাগানে গাছের পরিচর্যা করতেই কাটে। আর এখন এই লকডাউনের বাজারে তো কথাই নেই। বাগানের এক প্রান্তে বাড়িতে প্রবেশের প্রধান দড়জা।

সুবিমল দড়জার কাছে পৌছানোর আগে আরও বার তিনেক সেখানে কড়াঘাত হয়েছে। সে, কে কে বলে চিৎকার করেও কোন উত্তর পায়নি। দড়জার কাছে মুখ নিয়ে সুবিমল আবার বলল, - কে? বাইরে কে?

- আমি।

- আমি কে। সুবিমল গলাটা চেনার চেষ্টা করে।

- আমি বিমান রে।

নামটা কানে যেতেই গলাটাও চিনতে পারল সুবিমল। হ্যাঁ, বিমানের গলাই তো! আসলে ওকে এই সময় এখানে আশা করেনি বলে গলাটাও চিনতে পারেনি। দড়জাটা খুলে দিল সে।

উল্টোদিকের বাড়ির দোতলার খোলা জানলা দিয়ে ব্যাটারিতে জ্বলা টিউব লাইটের হালকা আলো গড়িয়ে এসে সদর দরজায় পড়েছে। আবছা আলো-অন্ধকারে ছায়ামূর্তির মতন সামনে বিমান দাঁড়িয়ে। তার সেই পরিচিত খদ্দরের পাঞ্জাবী আর ঢোলা পায়জামা। হাতে সেই একটা বাজারের ব্যাগ।

- কি ব্যাপার রে? এই সময় বাজারের ব্যাগ হাতে কি করছিস? আর বাড়ি থেকেই বা বেরিয়েছিস কেন? চারিদিকে বলছে বাড়িতে থাকুন বাড়িতে থাকুন, তুই তার মধ্যেওতোর কি আক্কেল কোন কালেই হবেনা? আর এতবার কে কে করছি, একটা সাড়া দিবি না? এক ঝটকায় অনেকগুলো প্রশ্ন করে সুবিমল নিজেই হাঁপাতে থাকে।

- ওফ! একটু দম নে। আজ প্রায় তের দিন তোর সাথে দেখা নেই। বাবলুর চায়ের দোকানটাও বন্ধ। তাই মানে একটুবিমান আগের মতনই মুখ টিপে হাসতে থাকে।

- তাই মানে কি? তুই সোজা আমার বাড়ি চলে আসবি? এতটা পথ ঠেঙিয়ে? প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে। সুবিমল রেগে ওঠে আবার।

বিমান সুবিমলের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের মধ্যে একজন। একসাথেই স্কুলে পড়া। কলেজে গিয়ে সুবিমল নিয়েছিল সায়েন্স আর বিমান আর্টস। তারপর কাজের সূত্রে দুজনে আলাদা হলেও সন্ধ্যায় বাবলুর চায়ের দোকানের আড্ডাটি বজায় ছিল। আর রোজ সকালে বাজারে একসাথে দড়দাম করে সবজীওয়ালা মাছওয়ালাদের নাস্তানাবুদ করাটা ছিল ওদের প্রীয় খেলা। সে সবই আজ বন্ধ ওই হতচ্ছাড়া করোনার দৌলতে এমনিতেই স্বভাব খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে সবার। সুবিমলও ব্যতিক্রম না।

অবশ্য সুবিমলের রাগের অন্য একটা কারণও আছে। পাঁচ মাস আগেই বিমানের পেসমেকার বসেছে। বিমান প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেলেও, তার বন্ধুদের তাকে নিয়ে একটা ভয় রয়েই গেছে।

- আহা! চটছিস কেন? তোর টানেই না আসা। বিমান নরম গলায় বলে।

- চটব না! এমন ছেলেমানুষী কেউ করে? আয় ভিতরে আয়। একটু ঠান্ডা হয়ে বলে সুবিমল।

- না বাবা! ভিতরে গেলে ম্যাডা্ম তেড়ে আসবে। তোকে বলেছে না, কাউকে যেন ফস করে ঘরের ভিতরে না নিস।

- আরে; কাউকে আর তুই কি এক হলি? হাসি ফোটে সুবিমলের মুখে।

- না রে! তারচেয়ে বরং তুইও চলে আয় না! একটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে। চল না একবার বাজারটা ঢুঁ মেরে আসি।

- এখন! তোর কি মাথা খারাপ?

- চল চল। চারদিক শুনশান। কেউ কোত্থাও নেই। কে দেখবে বল! কতদিন বাজার করি না একসাথে। আর সময় হবে কিনা, কে জানে! আজ যখন এসেই পড়েছি, তখন চল। রোজ রোজ আর এতটা পথ ঠেঙিয়ে তোর কাছে আসা হবে না।

- তুই কি এখনও রোজ বাজারে যাচ্ছিস? আগের মতই? শঙ্কিত চোখে তাকাল সুবিমল।

- হ্যাঁ! যাচ্ছিলামতো। ওটাই তো আমার একটা নেশা। তুই তো জানিস ভাইশেষে সবাই জোর করে গৃহবন্দী করে রাখল।

- তাও ভাল। এই বাজার করেই আমরা মরব বুঝলি!

- কি বলছিস বিমল! তুই এই কথা বলছিস? আমাদের না রোজ বাজারে দেখা না করলে ভাত হজম হত না!

- সে সময় অন্যতাছাড়া সন্ধ্যাবেলা বাজার তো এখন বসছেই না। কোথায় যাব?

- কে বলল! আমি দেখে এলাম বাজার দিব্যি বসেছে। সবাই ঠিক চলছে, তুই শুধু ভয়ে মরে আছিস।

- তাও, আমি যাব না। সে তুই আমায় ভীতুই ভাব আর যাই ভাব। সুবিমল কঠিন গলায় বলল।

- সত্যি যাবি না? করুণ চোখে চাইল বিমান।

- না বিমান। আর তুইও যাস না। সোজা বাড়ি যা। আমি এখুনি পল্টুকে ফোন করে জানাচ্ছিআচ্ছা, তোকে বাড়ি থেকে বাইরে যেতে দিচ্ছে কেন? চারদিকে এত প্রচার। পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই এত করে সাবধান করছে। বাঁচতে হলে এগুলো যে আমাদের মানতেই হবে। একটানা কথাগুলো বলে থামল সুবিমল।

- শুনছো! কে এল। এতক্ষণ কি করছ? দূর থেকে আশার গলা ভেসে আসে।

- যা বিমল। ম্যাডাম ডাকছে। কয়েক মুহুর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বিমান। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, - একান্তই তবে যাবি না? আমি তাহলে একাই এগোই। সাবধানে থাকিস তুই। চলি রে।

দড়জাটা বন্ধ করে দিল সুবিমল। আবার একটা জমাট অন্ধকার সাময়িকভাবে চোখ ঢেকে দিল তার।

- কে এসেছিল? ঘরে ঢুকতেই প্রশ্ন করল আশা

টেবিলে রাখা মোবাইলটা তুলতে গেল সুবিমল। আশা সোফায় এলিয়ে বসেছিল। চকিতে উঠে বসে বলল, - করছো কী? আগে হাতে সাবান দিয়ে এস। খোকা ফোন করেছিল, তোমাকে চাইছিল। কি দরকার। বাইরে গেছ শুনে একচোট চোটপাট করল আমার উপর।

- আহঃ! তোমার বেশী পিটপিটানি। কথায় কথায় খালি সাবান দাও। আর বাইরে গেলাম কোথায়! সদর দড়জার বাইরে যাইনি তো। বিমান এসেছিল। একটু কথা বলছিলাম। আর মাঝেমধ্যে একটু-আধটু বাইরে গেলে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয় না। তুমি একটা কাজ কর মোবাইলের টর্চটা জ্বাল তো। অন্ধকার আর ভাল লাগছে না।

- তাহলে তো নিশ্চই ছোঁয়াছুঁয়ি করেছ। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা। এতদিন পর দেখা। আবার চুমু-টুমু খাওনি তো? মোবাইলের টর্চে ঘর সামান্য আলোকিত হয়ে উঠল।

- কি যে বল! সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে একদম দূর থেকে। তোমার স্বামীটিকে যতটা আহাম্মক ভাব ততটা তিনি নন। কথাগুলো বলতে বলতে সুবিমল বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল।

- খোকা কি বলছিল? ওরা বাড়ি থেকে বাইরে যাচ্ছে না তো? নাকি শুধু বাবাকেই জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে। নিজের বেলা ফক্কা।

- কে জানে। কিছু বলল না। তুমি কোথায় জানতে চাইল। বাইরে গেছ শুনে একটু বকাবকি করল। তারপর বলল তুমি এলে ফোন করতে।

সুবিমল ফিরে এসেছে ঘরে। টেবিল থেকে মোবাইলটা তুলে ছেলেকে ফোন করল সে।

- পল্টুকেও একটা ফোন করতে হবে বুঝলে। বাপটাকে ঘরে আটকে রাখতে পারছে না? আমি তো আজ অনেক কথা শোনালাম। বাবু আবার বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়েছেন। বিমান যে তাকেও দলে টানতে চাইছিল, সেটা সুবিমল চেপে গেল।

রিং হয়ে হয়ে ফোনটা কেটে গেল। সুবিমল আলগোছে শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বলল, - আর এক কাপ চা হবে? আগেরটা ঠিক জমে নি। আর দেখ না কোন মোমবাতি-টাতি পাও কি না! ভূতের মতন আর কতক্ষণ বসে থাকব? কখন আসবে কে জানে। চারিদিকে অফিস কারখানা দোকান সব বন্ধ তাও যে কিভাবে কারেন্ট যায়

সুবিমলের কথা শেষ হওয়ার আগেই সদর দড়জায় আবার যেন ধাক্কা দিল কেউ।

- কে এল আবার! এই অন্ধকারে আচ্ছা জ্বালাতন হল দেখছি। গজগজ করে ওঠে আশা।

বিমান ফিরে এল কি? সেই হবে। এইটুকু সময়ের মধ্যে আর কে আসবে। মনে মনে চিন্তা করল সুবিমল।

- দেখ তাড়াতাড়ি। আমি চা করছি, জলদি ফিরে এসে বস। এই শেষ। আমি বারবার আর চা করতে পারব না।

অগত্যা! সোফা ছেড়ে উঠল সুবিমল। সদর দড়জায় আবার জোরে ধাক্কা পড়ল। দড়জা খুলতেই একটুকরো আলো আবার আগের মতন ঝিলিক দিয়ে উঠল। বিমান নয়। প্রশান্ত। পিছনে আরও কয়েকজন পাড়ারই ছেলে। প্রশান্ত টুকটাক ছাত্র পড়ায় আর সন্ধ্যাবেলা বাবলুর চায়ের দোকানে রাজনীতি থেকে খেলাধূলা নিয়ে ঝড় তোলে। এখন প্রশান্ত আর তার কয়েকজন বন্ধু মিলে এই দুঃসময়ে সমাজসেবা করে বেড়াচ্ছে, সে খবর সুবিমল জানে। তাই ওদের হঠাৎ দেখে সুবিমল খুব আশ্চর্য হল না।

- কি ব্যপার, মিস্টার সমাজসেবী! একেবারে দলবল নিয়ে। মুচকি হেসে বলল সুবিমল।

- বাড়ি থেকে বাইরে যাচ্চেন না তো কাকু? প্রশান্ত বাড়ির ভিতরে উঁকি দিয়ে বলল।

- না! একদম গৃহবন্দী।

- তাহলে খবরটা জানেন না!

- কি খবর?

- ইয়ে মানে, গত সপ্তাহে বিমান কাকুর পজিটিভ ধরা পড়েছে।

- বল কি! যেন আকাশ থেকে পড়ল সুবিমল।

- হ্যাঁ। বাড়ির সবাই এখন কোয়ারেন্টিনে।

- কিন্তু একটু আগে যেকথাটা শেষ করল না সুবিমল।

- একটু আগেই তো খবরটা পেলাম আমরা। আজ বিকালেই মারা গেছেন। বডি তো পাওয়া যাবে না। হাসপাতাল থেকেই যা করার করবে। আপনার এতদিনের বন্ধু। তাই ভাবলাম আপনাকে জানানো দরকার।

একটু থেমে প্রশান্ত আবার বলল, - বাজার যওয়াটাই কাল হল। পল্টুদা মাসিমা রোজ বারন করতেন, কে কথা শোনে! হার্টের রোগতো ছিলই আগে থেকে।বাজার থেকেই সম্ভবত নিয়ে এসেছিলেন রোগটা।

সুবিমলের মাথাটা একটু টলে গেল যেন। দড়জার একটা পাল্লা ধরে সামলে নিল সে। গলার কাছটা দলা পাকিয়ে উঠছে ক্রমশ।

- আপনারা সাবধানে থাকুন। ছেলে বাইরে, দুজন বয়স্ক মানুষ একা থাকেন। কোন দরকার হলে আমাদের বলবেন। আমার মোবাইল নাম্বার তো আছে আপনার কাছে। আজ চলি।

- জানাবো দরকার হলে। দড়জাটা আস্তে আস্তে বন্ধ করতে করতে বলল সুবিমল।

ঘরে এসে সুবিমল দেখল আশা চা নিয়ে ঘরের টেবিলে রাখছে। একটা মোমবাতিও পাওয়া গেছে। সেটা টেবিলের মাঝখানে জ্বালিয়েছে সে। একদম ঠিক সময়ে ফিরে এসেছে সুবিমল।

- কে এসেছিল? চায়ের কাপটা তুলে সুবিমলের সামনে ধরে বলল আশা।

- কেউ না। দাঁড়াও আগে হাতে সাবান দিয়ে আসি ভাল করে। বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল সুবিমল। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, - আর হ্যাঁ। বাজার আছে তো! এখন কিন্তু আর বাইরে যাওয়া যাবে না মোটেই। আজ থেকে একদম লকডাউন। পুরোপুরি গৃহবন্দী।    

-- সমাপ্ত --

Comments

Popular posts from this blog

ছুটি

প্রতিশোধ

পরশ পাথর