Posts

ছুটি

  ছুটি রাজ চক্রবর্ত্তী সময় হল। এবার যেতে হবে অবিনাশকে। রাত গভীর থেকে ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে চলেছে শেষের পথে। দমকা হাওয়ায় উড়ছে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ বটের পাতা। রাত জাগা পাখিগুলো মাঝেমাঝে এসে দেখে যাচ্ছে পরিস্থিতি। সাথে যারা এসেছিল, অনেকেই এদিক সেদিক বসে ঢুলছে। আজ শ্মশানে লাইন অনেক বেশি। রাত প্রায় শেষের দিকে। পায়ের কাছে ছোট ছেলে অনিন্দ্য বসেছিল অনেকক্ষণ। একসময় সেও উঠে গেছে বিরক্ত হয়ে । টিমটিমে আলোতে দৃশ্যমানতা অনেক কম। অনিন্দ্য পরপর শুয়ে থাকা দেহগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাইরে এসে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিল। নিতাই তার দলবল নিয়ে বট গাছটার আড়ালে গিয়ে গলায় তরল ঢালতে শুরু করেছিল এখানে এসেই । এখন সেখানেই সব বসে ঝিমোচ্ছে। অনিন্দ্য একটা বিড়ি ধরালো। কখন এই জ্বালাতন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কে জানে! দেশলাইয়ের আলোয় আশপাশটা মুহূর্তের জন্য আলোকিত হয়ে আবার ডুবে গেল আধারে। গতকাল দুপুর অবধি বেশ ছিল অবিনাশ। বিনোদবিহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস ক্লার্ক অবিনাশ সামন্ত। স্কুলটা তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল। অন্যদিন পার্টি অফিসে গিয়ে একটু বসে। কাল সোজা বাড়ির পথে হাঁটা লাগিয়েছিল। এই সময় সে কোনদিন ফেরেনা। আজ তাক

পরশ পাথর

  পরশ পাথর রাজ চক্রবর্ত্তী রাজভবন ছাড়িয়ে আসতেই মেঘ ভেঙে জলের ধারা নেমে এল। কার্জন পার্কের মুখটা অন্ধকার । রূপক বাধ্য হয়েই পার্কে ঢুকে প্যানিওটি ফাউন্টেনের দিকে ছুটলো। লর্ড কার্জনের সাধের ফাউন্টেনের উপরের চালাটা যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। অন্ধকারে হাতড়ে সিড়ির উপরের ধাপে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল রূপক। চারদিকে আগাছায় ভর্তি, অথচ কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ সাইটগুলির তালিকায় এটি গ্রেড ওয়ান সৌধ। একমাত্র সম্বল পঞ্চাশ টাকার নোটটা ভিজেছে কিনা দেখে নিল রূপক। সত্যজিৎ রায়ের পরশ পাথর সিনেমায় এখানেই পরেশচন্দ্র দত্ত পেয়েছিলেন পরশ পাথর। সেদিনটাও এমনই বৃষ্টি ছিল । আহা আজ আমি যদি একটি পেতাম। কথাটা ভেবে ঘুরতেই শক্ত কি যেন পায়ে লাগল রূপকের । নিচু হতেই একটা ছোট ইঞ্চি তিনেকের পাথরের মূর্তি হাতে উঠে এল। কালচে মূর্তিটা যে কিসের সেটা বোঝা মুশকিল। বিদ্যুৎ চমকে দেখা গেল মূর্তিটা রোগা পাতলা কোন এক দেবতার। মাথায় জটা, একটা হাত উপরের দিকে তোলা। কতদিন এখানে পড়ে আছে কে জানে! ধুলোয় কাদায় একেবারে জবজবে হয়ে রয়েছে। কেবল চোখ দুটো উজ্জ্বল আর টকটকে লাল। এখানে এটা এল কি করে? পরশ পাথর নয় তো? লোহার কিছু একটা পাওয়া

সারোগেট মাদার

  সারোগেট মাদার রাজ চক্রবর্ত্তী —টাকার অঙ্কটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? —মোটেই না মিস্টার রায়! ভেবে দেখুন, ম্যাডামের এত বড় একটা স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। হাত কচলিয়ে বললেন ডঃ সামন্ত । হিমাদ্রি পাশে বসা রত্নার দিকে তাকাল। রত্না করুণ চোখে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল নীরব দৃষ্টি বিনিময়ে। এবার চেকবুকটা বের করে হিমাদ্রি তাতে মন দিল। রত্না এতক্ষণ চুপ করেই বসেছিল। এবার বলল, —মেয়েটা ভালো ঘরের তো? মানে যেমন তেমন পরিবারের মেয়ে হলে কিন্তু আমার আপত্তি আছে। —একদম খানদানী ম্যাডাম। এই নিয়ে ওর তিন নম্বর কাজ । আগের ক্লায়েন্ টরা খুবই খুশি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। একজন ডাক্তারের মুখে খানদানী, আগের ক্লায়েন্ট শব্দগুলো শুনে গা গুলিয়ে উঠল রত্নার। কিন্তু সে নিরুপায়। —ওকে একবার দেখা যায়? —আজ তো হবে না ম্যাডাম। পরে দেখছি। যদি একটা সিটিং করান যায় আপনাদের মধ্যে। টুং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকতেই সেদিকে মন দিলেন ডঃ সামন্ত । রত্না নিজের চিন্তায় ডুবে গেল। কম চেষ্টা তো তারা করেনি। যতরকমভাবে সম্ভব। বিয়ের দশ বছর পরও ব্যর্থ হয়ে শেষে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা। দুজনেই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। অর্থ

উৎসর্গ

  উৎসর্গ স্বরাজবাবু ল্যাপটপটা চালিয়ে দিলেন । আগে কাগজ কলমেই লিখতেন । বছর খানেক আগে মেয়ে রিয়া এটা কিনে দিয়েছে । অবসর নেওয়ার পর কিভাবে সময় কাটাবেন সেটাই চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বারাজবাবুর । এতবড় বাড়িতে তিনি একা । স্ত্রী যখন চলে গেলেন রিয়ার তখন   বারো বছর বয়েস । নিজের দায়িত্বে মেয়েকে মানুষ করেছেন । আজ সে জার্নালিজম নিয়ে পড়াশুনা করে দিল্লিতে একটি বিখ্যাত সংবাদপত্রে কর্মরতা । কাজেই স্বরাজবাবু এখন মুক্ত । রিয়াই তাকে পথ বাতলেছিল ,- আগে তো লেখার চর্চা ছিল তোমার ! আবার শুরু করো না । সময় কেটে যাবে । তাই করেছেন । এই চার বছরে কত নতুন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তিনি । কত চেনা অচেনা মানুষ তার কলমের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে । তাঁর লেখা কোন পত্রিকায় বের হলে সবার আগে রিয়া তার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানায় । বলে একটা লেখা আমায় উৎসর্গ করো বাবা । প্লিইজ ! তাঁর নতুন গল্পটা গতকালই বেড়িয়েছে একটা দৈনিকের রবিবারের পাতায় । তাঁর জীবনের একটা ঘটনা নিয়ে লেখা । শুধু নাম আর স্থান তিনি

প্রতিশোধ

  প্রতিশোধ রাজ চক্রবর্ত্তী নৃসিংহ দত্ত রাতের খাওয়া শেষ করে ব্যলকনিতে এসে ইজি চেয়ারটায় বসলেন । এটা তার বহু দিনের অভ্যাস । বাড়িতে থাকলে রাত্রে খাওয়ার শেষে অন্তত এক ঘন্টা এখানে এই চেয়ারটায় তাঁর বসা চাইই চাই । স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বালিগঞ্জ প্লেসের এই ছোট দোতলা বাড়িটাতে যখন উঠে আসেন তখন তার বয়েস চৌষট্টি । নিঃসন্তান নৃসিংহ দত্তের নিটক আত্মীয় বলতেও তেমন কেউ নেই । পেশায় লেখক নৃসিংহ নিজের কল্পনার জগতে বাঁচতেই পছন্দ করেন । মাঝে মধ্যে লেখার কাজে বা কোন সভা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যখন বাইরে কোথাও যেতে হয় তখন এই বাড়ি পাহারার দায়িত্বে থাকে নরেন । সে এই পাড়াতেই সাত আটটা বাড়ি পরে থাকে । এক সাহিত্য সম্মেলনে তার সাথে আলাপ নৃসিংহের । প্রথম আলাপে বেশ ভালোই লেগেছিল নরেনকে । তারপর ফোনে যোগাযোগ , সেখান থেকে বাড়িতে যাতায়াত । নরেন সদ্য এম . এ পাশ করেছে । তার ইচ্ছা সেও নৃসিংহ স্যারের মতন লেখক হবে । তাই নৃসিংহ দত্তর সাথে লেগে রয়েছে । তার ছোটখাট ফাই - ফরমাশ খেটে